আলো ও অন্ধকার- মাঝখানে প্রচার - আত্মজ উপাধ্যায়
সারা পৃথিবী এখন (২০২০) নষ্ট রাজনীতির খেলনা হয়ে গেছে। গত ২০০ বছরের ইতিহাস যেভাবে গড়ে উঠেছে, তাতে সত্যের মাটি নাগাল পাওয়া খুবই সমস্যার। প্রচার দুনিয়া এমন জট পাকিয়ে রেখেছে। সারা পৃথিবীতে মানুষ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য খল চরিত্রের মুখোশ পড়েছে। কেউই আর সততার জামা পড়তে চাইছেনা। স্বার্থসিদ্ধি যখন মূল কথা তখন যুদ্ধ প্রেম ও সমাজ কোন নীতির ধার ধারেনা। অসংখ্য শ্রেণিতে বিভক্ত সমাজ। রাজনীতি মূলতঃ capitalism ও communism এ বিভক্ত। দুটোই আগ্রাসন নীতির দ্বারা পরিচালিত। দুটোই গণহত্যাকারী। দুটোরই কাজ এক, উদ্দেশ্য এক। এরা ক্ষমতা দখল করতে চায়, নিজেদের- স্বজনদের অসীম নিরাপত্তা সহ ভোগ দিতে চায়, সাধারণ মানুষের রক্ত ও ঘামের দামে। কেউ চায়না, সবাই - অন্ততঃ এই গ্রহের বৃহত্তর সংখ্যা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকুক। খাওয়া- পড়া- বাঁচা- কাজ- আশ্রয়- ইত্যাদি সমান বন্টন হোক।
ক্যাপিটালিস্টদের (সাম্রাজ্যবাদীদের) সবচেয়ে খারাপ দিক হল তারা ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে ভুলপথে চালিত করে। আর কমিউনিস্টদের খারাপ দিক হল তারা সর্বহারা ও শ্রমজীবিদের ব্যবহার করে রাজনীতি করে। আর এই দুটোই লোকের কাছে পৌছাবার যানবাহন হল প্রচার মাধ্যম। খবর, সোস্যাল মিডিয়া, সাংস্কৃতিক প্রকাশনা। ক্রমাগত কতগুলি আধা-সত্য বলে মিথ্যা মেশাতে থাকে। প্রলোভন, উত্তেজনা, ভয় ইত্যাদি ব্যবহার করে যন্ত্রের মত।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কম্যুনিস্টদের হঠাৎ প্রকাশ। মানুষের সমাজে সাম্যতা আনবে; এমন শ্লোগান তুলে, সর্বহারা ও শ্রমজীবিদের প্রলোভন দেখাল, তারা সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থায় সমান বন্টন আনবে, সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে নিরাপত্তা পেয়ে সুখে থাকবে।একবিংশ শতাব্দীতে, ১০০ বছর পরে, তাদের মুখোশ খুলে গেল। দেখা গেল তারা সাম্রাজ্যবাদী ক্যাপিটালিস্টদের চেয়ে অধিক জহ্লাদের ভূমিকা নিয়েছে। চীন বাদে সারা পৃথিবী থেকে কম্যুনিস্ট মুছে গেছে। আর চীনকে কম্যুনিস্ট বলা যাবেনা, এও আরেক রকম সাম্রাজ্যবাদী, নিজের দেশের অশান্তি প্রকাশ না করার জন্য খবরের মুখে লাগাম দিয়ে নাগরিক নিপীড়ন চালাচ্ছে। একনায়কত্ব, কর্তৃত্ববাদী রাস্ট্র।
যতগুলি কম্যুনিস্ট নেতা, সারা বিশ্বে জেগে উঠেছিল, দেখা গেল তারা প্রত্যেকেই কুবেরের সম্পদ পেয়েছে, বিলাস ব্যসনের সীমাহীন প্রাচুর্যতা পেয়েছে। নারী ও শ্রমজীবি মানুষকে শৃঙ্খলে বেঁধে এক চেটিয়া শোষণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে যারা গেছে তাদের খুন করে দিয়েছে।
ভাড়া সংগ্রহের উঠানঃ চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভাস্কর্য।
১৯৬৫ সালে (চীনের বিপ্লব বা ২য়গৃহযুদ্ধ হয়েছিল ১৯৪৫ সালে) বিখ্যাত প্রলেতারেত সাংস্কৃতিক বিপ্লব কে সামনে রেখে সিচুয়ান আকাডেমি অব ফাইন আর্টসের ঈয় ইয়ুশান (Ye Yushan of the Sichuan Academy of Fine Arts) এর নেতৃত্বে আঠারোজন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের দ্বারা ১১৪টি মাটির ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছিল। একদম মানুষের উচ্চতায় ভীষণ বাস্তবিক ঢংয়ে। জমিদারের উৎপীড়ন বনাম অসহায় চাষাদের দুর্দ্দদশাকে মূল উপজীবিকা করে। নীচের আলোকচিত্রগুলি তারই নমূনা।
এই ছবি সারা বাঙ্গলা নয়, সারা পৃথিবীতে, শিল্প নয় মানুষের জীবন; কত অসহায় হতে পারে বা চাষারা কি করতে পারে এই বার্তা দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ভাস্কর্যকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কাজে লাগান হয়েছিল।যার নাম ছিল মহান সর্বহারা সংস্কৃতি বিপ্লব।
ভাড়া সংগ্রহ আদালত ভাস্কর্য - সামন্তবাদী নিপীড়ন থেকে চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লব পর্যন্ত। ভাড়া সংগ্রহ আদালত. ১১৪টি মানুষের মত -আকারের ভাস্কর্য সিচুয়ান প্রদেশের দায়ি জেলার (Dayi County, Sichuan) গ্রামের জমিদার লিউ ওয়েঞ্চাই (Liu Wencai) এর পুরাণো বাড়ির উঠানে স্থাপন করা আছে। এগুলি তৈরি করেছেন ইয়ে ইউশান(Ye Yushan) এবং সিচুয়ান এবং ফাইন আর্টস সিচুয়ান একাডেমির (Sichuan Academy of Fine Arts) ভাস্করদের একটি দল।১৯৬৫ সালে।. এটি সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদী একটি বিখ্যাত ভাস্কর্য; যেখানে দেখানো হচ্ছে দুষ্ট জমিদার দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। এটি সংস্কৃতি বিপ্লবের অন্যতম শক্তিশালী কাজ। প্রচারের কাজ হিসাবে আরও শক্তিশালী করে এগুলির নকল বানানো আছে বেইজিংয়ে এগুলি প্রচারের ভাস্কর্য হিসাবে খুবই শক্তিশালী।
১৯৯৯ সালের ভেনিস বিয়েনলে, সমসাময়িক চীনা শিল্পী Cai Guo-Qiang ভেনিসে 'ভাড়া সংগ্রহের উঠান' ভাস্কর্যগুলির উল্লেখ করেছিলেন যেখানে তিনি ভাস্কর্যটি পুনর্নির্মাণের জন্য কিছু শিল্পী ভাড়া করেছিলেন।
সবগুলিই সিরামিক ভাস্কর্য রয়েছে যা আখ্যানের ধারায় সাজানো হয়েছে, সিচুয়ানার কৃষকদের বাস্তব জীবনে বাড়িওয়ালা লিউ ওয়েন-সাইয়ের দাসত্ব কেমন নিষ্ঠুর ছিল। লিউর বিশাল ম্যানর-হাউজের প্রকৃত ভাড়া সংগ্রহের উঠোনে প্রাথমিকভাবে প্রদর্শিত, ভাস্কর্যগুলিতে দেখানো হয়েছে, লিউর হাতে কৃষকদের নির্মম দারিদ্র্য ও নির্মম কষ্ট। এবং কীভাবে তারা শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দাড়াবার শক্তি পেয়েছিল। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় ভাস্কর্যগুলি চীন ভ্রমণ করেছিল এবং এটি অনুমান করা হয় যে এগুলি ২ কোটিরও বেশি লোক দেখেছিল।
পুরো বিষয়টা রাজনৈতিক খেলা, ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘটনা, এবং রাস্ট্রগুলির একে অপরের প্রতি ঠান্ডা- ছদ্মবেশি আগ্রাসনের নীতি। ক্যাপিটালিস্টদের টাকায় এদেশে ওদেশের রাজনৈতিক পালা বদল হয়। রাশিয়ার বিপ্লব লেনিনের নেতৃত্বে জার্মানি্র বিপুল রাশি টাকায় শুরু হয়েছিল। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮, এই সময়টায় মোট ৫০ লক্ষের উপর মানুষ মারা গেছে আধা মড়া হয়েছে। এটা কি কষ্টের নয়?এবং রাশিয়ার পরিণতি কি হল?১৯২১-২২ সালের রাশিয়ার দুর্ভিক্ষ মূলতঃ ভোলগা, উরাল নদীর এলাকা দিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষের উপর মারা গেছে। এই দুর্ভিক্ষের কারণ নেতারা।
চীনে, ১৯৫৮-৬১, বড় দুর্ভিক্ষে, রাজনৈতিক নেতাদের সৃষ্ট, মাও সে-তুং য়ের আমলে ২কোটি লোক মারা গেছে। কেউ কেউ বলেন প্রায় ৫কোটি মারা গেছে। এছাড়া কৃষক উত্থানে সামন্ত প্রভু- জমিদার খুন খারাপী নৈরাজ্য চলেছে।
২য় বিশ্বযুদ্ধে (1937–1945) চীনের ৫১ কোটি লোকসংখ্যার ২ কোটি মারা গেছে।
(13th Amendment to the U.S. Constitution: Abolition of Slavery)
১৮৬৫ সালের ৩১শে জানুয়ারি, কংগ্রেস দ্বারা একটা সংশোধনী আমেরিকার সংবিধানে মঞ্জুর হয় এবং ৬ ই ডিসেম্বর জানুয়ারী নিয়মটি অনুমোদিত হয়েছিল, ১৩ তম সংশোধনীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্বকে বাতিল করা হয়েছিল এবং এই বিধান দেওয়া হয়েছে যে "দাসত্ব বা অজ্ঞানপূর্ব দাসত্ব/অনিচ্ছাধীন গোলামী চলবেনা; আমেরিকাতে বা আমেরিকার অধিকার আছে এমন জায়গাতে যদি কেউ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয় তার শাস্তি ব্যতিক্রমে। "Neither slavery nor involuntary servitude, except as a punishment for crime whereof the party shall have been duly convicted, shall exist within the United States, or any place subject to their jurisdiction."
আমেরিকায় কিন্তু শোষণের বিরুদ্ধে কম্যুনিস্ট ধাপ্পাবাজির দরকার হয়নি বা লক্ষ লক্ষ গণহত্যা করতে হয়নি।
No comments:
Post a Comment