Translation in your mothers language

Thursday, September 2, 2010

আমি কেন লিখি? Why I write

আমি কেন লিখি?

লোকে কেন লেখে? এসব প্রশ্ন নিজেকে করে দেখেছি। বিভিন্ন রকম মানুষ বিভিন্ন রকম তাগিদে লেখে। বিভিন্ন ধরনের লেখে। কেউ হয়ত কোন ঘটনাকে স্মরণ রাখার জন্য লিখে রাখেন। ইতিহাস রচনা করেন, খবর লেখেন। কেউ হয়ত নিজেকে প্রকাশ করার জন্য লিখে থাকেন। কেউ একান্তই নিজের জন্য লিখেন। লিখে লিখে নিজের জীবনের হিসাব করেন, কতটা ভুল করেছেন, কতটা শুধরাবেন বা নিজের আনন্দের জন্য লেখেন। নিজের ভয়ের কারণ খুঁজতে লেখেন। কেউ নেহাত পয়সা কামাবার জন্য লেখেন। কারণ কেউ ফরমায়েশ করেছে কোন বিষয়ে লিখে দিতে হবে। কেউ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার জন্য, সমাজের গতি নিয়ন্ত্রনের জন্য লেখেন। কেউ অমরত্ব লাভ করার জন্য লেখেন, তাঁর ধারণা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর লেখা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে। কেউ ভাবেন এর মাধ্যমে অন্যকে আনন্দ দান করতে পারছেন।

বিখ্যাত লেখক-মনীষীগণের লেখা থেকে আমরা জানতে পারি যে তাঁরা নিজেদের অন্তরে কিছু লিখে প্রকাশ করার তাগিদ অনুভব করতেন, না লিখে শান্তি পেতেন না । তাঁদের ভিতরে আগুন ছিল,সেই আগুন প্রকাশ করার জন্য দহন হত, সেই দহন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাঁরা লিখতেন। লেখা একটা শিল্প, তাতে অর্থ ও খ্যাতি আছে। মানুষের খ্যাতি পাওয়ার লোভ আছে। তাই লিখে নাম যশ পেতে চান অনেকে। এরকম বহু কারণ আছে মানুষের লেখার পেছনে।
আমি কেন লিখি এর পেছনেও এইরকম কিছু কারণ।
খুব ছোটবেলায় লেখকদের খ্যাতি দেখে লেখালেখির উপর আস্থা জন্মেছিল। আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু 'কেন লিখি' এই প্রশ্ন নিজেকে কোনদিন করতে হবে ভাবিনি।বড় হয়ে মনে হয়েছে এই প্রশ্ন করার সংগত কারণ আছে। এবং বড় হয়ে এই প্রশ্নের উত্তর ভাবতে হয়েছে। ভাবতে হয়েছে নিজের প্রয়োজনের তাগিদে, নিজেকে নিরাপত্তা দেওয়ার তাগিদে, লিজের উত্তরণের তাগিদে।
আমরা সবাই লিখি। লেখা আমাদের সমাজ জীবনে ও কর্মজীবনে আবশ্যিক অভ্যেস। এই অভ্যেস ছাড়া আমাদের সংসার, সমাজ অচল। তবু যখন 'লেখালেখি' শব্দটা ব্যবহার করি বা বলি আমরা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের কথা বলি। যাঁরা বিশেষভাবে লেখাকে ব্যবহার করেন। তাঁরা গল্প, কবিতা,প্রবন্ধ, খবর, ইতিহাস, গবেষণা ইত্যাদি নানা বিষয়ের উপর লেখেন। সমাজে তাঁদের লেখক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সবাই লেখে কিন্তু লেখক নন। কেউ কেউ লেখক। লেখকদের মধ্যেও
হাজার হাজার মানুষ। আমরা সেরা কয়েকজনকে বেছে নিই, যাঁদের লেখা আমাদের ভাল লাগে। অর্থবহ মনে হয়। কেউ কিছু লিখলেই আমরা পড়ি না। যে লেখক লেখার মাধ্যমে তাঁর বিশ্বাস যোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছেন আমরা তাঁর লেখা পড়ি। সুতরাং আমাকে ভাবতে হচ্ছে যখন আমি লিখব আমার লেখা যেন লোকে পড়ে। লোকে না পড়লে আমার শ্রম বৃথা, আমি প্রত্যাশিত পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হব। এই অবস্থাটা কোন লেখকের কাম্য নয়। এই জায়গাতেই আমাকে উপরের প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেয় 'আমি কেন লিখি'। কোন অর্থবহ কারণ না থাকলে লিখে কি লাভ?


সাধারণ ভাবে নিজেকে যখন জিজ্ঞেস করি কেন লিখি, একটু তলিয়ে দেখি, অনুসন্ধান করি, তখন কিছু উত্তর উঠে আসে, সেই উত্তরগুলি অন্যান্য লেখকদের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলা যায় আমার মত বাকি লেখকরাও একই কারণে লেখেন। এই লেখার কারণ লেখকের বয়েসের সাথে সাথে, তৎকালীন দেশ ও সামাজিক সময়ের সাথে সাথে লেখার কেন্দ্রবিন্দু পাল্টে যায়। আমার কৈশোরে আমি পুরানো নামী কবিদের ঢংয়ে দেশাত্মবোধক কবিতা লিখেছি। মনে হয়েছিল আমার কিছু দেশাত্মবোধক কবিতা লেখা দরকার। তারপর যৌবনে ভালবাসার যত চুবানি খেলাম তা কবিতায় ধরে রাখতে ইচ্ছে হল। কিন্তু আমার ব্যর্থতা কবিতা লেখার প্রতি জেদ চাপিয়ে দিল। আমি এর জন্য আরো বেশী করে লিখতে লাগলাম। কী করে লেখার মাধ্যমে মানুষের মন জয় করা যায় ভাবতে লাগলাম। সমসাময়িক লেখা ও সাহিত্যের আন্দোলনগুলির ইতিহাস পড়াশুনা করতে লাগলাম। নামী নামী কবিদের গুরুত্বপুর্ণ লেখা ও তার সমালোচনা ব্যাখ্যা পড়ে আমার লেখার হাতকে শিক্ষিত করে তুললাম। আস্তে আস্তে আমার সামাজিক জীবনের টানাপোড়েন থেকে অভিজ্ঞতা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করার তাগিদ অনুভব করলাম। আমার কবিতায় স্থান পেল বিশ্বরাজনীতি, জীবনের অন্ধকার দিক, আলোর দিক, দর্শন, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি।
হঠাৎ কোন ভাবনা এল অমনি তাগিদ অনুভব করলাম লেখার। হতে পারে প্রবন্ধ বা কবিতা, যতক্ষণ না লিখছি শান্তি নেই। এই লেখা আমাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর্থিক মূল্য দেয় না। তবু লিখতে হয়, কাউকে পড়ে শোনাতে হয়।লিখতে গিয়ে সংসারের অন্য কাজ হয় না, লোকের কাছে অপদস্থ হতে হয়, তবু লিখতে পারলেই যেন শান্তি। এই লেখার মাধ্যমে কখনো কোন সামাজিক প্রতিবাদ, কখনো সমাজ কোন পথে চললে মঙ্গল হবে তার ভাবনা, এবং প্রতিদিনকার জীবনের অভিজ্ঞতা ও তার প্রতিক্রিয়া আমি ব্যক্ত করি। শুধু লিখি না, লেখাটাকে শিল্পসম্মত রূপ দিই ও সার্বজনীন গ্রাহ্য আবেদন হবে বলেই লিখি। আমার কতটুকু শৈল্পিক নৈপুণ্য আছে তা জাহির করার জন্যও লিখি।
বেশির ভাগক্ষেত্রেই লেখা ব্যর্থ হয় আর তার জন্যই লিখি। আমার আগে যাঁরা লিখে গেছেন, মহান হয়েছেন তাঁরাও আমার মতোই ছিলেন। তাদের অনুপ্রেরণাতেও আমার লেখনী চলে।


Courtesy : Karnika

http://www.karnika.co.in/karnika/7/pagearticle.php?nick=albertashok&type=5&ar_id=11

No comments:

Udaipur tailor murder case: Mohammed Riyaz Attari and Ghous Mohammed

  Religious Atrocity in India. How was Kanhaiya Lal killed? Why was the Udaipur tailor murdered? Kanhaiya Lal had written some allegedly obj...